ইকোনো এক্সপ্রেস নিয়ে সুন্দর রিভিউ, যা প্রতিটি যাত্রীর অনুসরন করা উচিৎ।


লিখেছেন: সাদ্দাম হুসাইন হৃদয়।
√√√★ নেগেটিভ//পজিটিভ রিভিউ ★√√√
রিভিউটা একটু বড় হলেও সবাইকে পড়ার অনুরোধ জানাচ্ছি __________________.
ঢাকা টু ব্রাহ্মণবাড়িয়া যাতায়াত করতে গিয়ে কমবেশি সব পরিবহনেই ভ্রমণ করেছি , বাকি ছিলো শুধু ইকোনো পরিবহনে ভ্রমণ করা !!
তাই বাস জার্নির ষোলকলা পূরণ করতেই গতকাল ঢাকা যাবার মাধ্যম হিসেবে বেছে নিয়েছিলাম ইকোনো পরিবহন।
বাস ভ্রমণের ক্ষেত্রে যেকোনো পরিস্থিতিতেই আমি A সিরিয়ালের অর্থ্যাৎ একেবারে সামনের চার সীটের যেকোনো একটি বেছে নিয়ে থাকি!!
যদি কোনোক্রমে A সিরিয়ালে সীট না পাওয়া যায়, তবে প্রয়োজনে পিছনের গাড়ির জন্য অপেক্ষা করি !!
যথারীতি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পৈরতলা ইকোনো পরিবহন এর নির্ধারিত কাউন্টার থেকে A সিরিয়ালের A3 সীট বেছে নিলাম।
যথা সময়ে ঢাকা মেট্রো-ব-12-0453 বাসটি পৈরতলা কাউন্টার ত্যাগ করে যাত্রা শুরু করলো।
বাস যখন ঘাটুরা পার হচ্ছিল, ঠিক সেই সময়ে বাসের সুপার ভাইজার বললো বিশ্বরোড গিয়ে আপনি সামনের ৮টি সীটের পরে যেকোনো একটিতে বসবেন!! আমি বললাম পিছনের সীটে বসবো কেনো আমাকে তো এই সীট দেওয়া হয়েছে!!
উনি বললো সামনের ৮ সীট ভৈরব আশুগঞ্জের জন্য বরাদ্দ, তাই এইগুলো ছেড়ে দিতে হবে।
আমি বললাম ভাই কাউন্টার থেকে তো আমাকে এমন কিছুই বলেনি!! যদি এমনটা আগে বলতো তাহলে তো আমি অন্যগাড়ী দিয়ে আসতাম, কেননা আর অন্য কোনো পরিবহনে আমি এমন সিস্টেম দেখি নি কোথাও !! আমি যতোটুকু জানি সীট ফাঁকা থাকলে যাত্রীর পছন্দ অনুযায়ী যেকোনো সীট ই যাত্রী নিতে পারেন!! আর যাত্রী সেবার অন্যতম একটি দিক হলো যাত্রীর পছন্দ অনুযায়ী সীট যাত্রীকে প্রদান করা!!
সুপার ভাইজার উত্তর দিলো, আমাদের সীট কাউন্টার অনুযায়ী ভাগ করা আছে, আপনি কাউন্টারে যোগাযোগ করে জেনে নিন!!
আমি তখন বললাম ভাই আমি এই সীট নিয়েছি, তাই এই সীট ছাড়া অন্য সীটে যাবো না, প্রয়োজনে আপনি টিকেট রিটার্ন নিয়ে বিশ্বরোড পর্যন্ত ভাড়া রাখুন, আমি অন্যগাড়ী দিয়ে যাবো!!
সুপার ভাইজার বলে আপনি পৈরতলা কাউন্টারে গিয়ে টিকেট ফেরত দিয়ে আসুন, আপনাকে তো আর আমি টিকেট দেই নাই, আর টাকা ও আপনি আমাকে দেন নাই !!
আর যেতে চাইলে আপনাকে পিছনের সীটে বসেই যেতে হবে !!!
ইতিমধ্যেই গাড়ী বিশ্বরোড এসে পৌঁছাল!!
বাস থেকে নেমে বিশ্বরোড কাউন্টারে জানতে চাইলাম এই সীট দিতে সমস্যা হবে কিনা ?
পাশেই বসা ছিলো গাড়ীর সুপার ভাইজার।
সে বলতেছে এইটা নাকি আরেক জনের সীট!!
আমি তাকে বললাম যে আমি সামনে সীট না পেলে প্রয়োজনে পিছনের গাড়ীতে যায়!! আমার কথা শুনে সুপার ভাইজার উত্তেজিত হয়ে বললো আপনাকে ওনে বসেই যেতে হবে !!
সে আবার আমাকে প্রশ্ন ছুড়লো আপনি কি যাবেন ???
আমি অনেকটাই হতভাগ হলাম তার এমন আচরণে!! একজন যাত্রীর সাথে একজন সুপার ভাইজারের যতোটুকু ভদ্রতা দেখানোর কথা, তার ছিটেফোঁটা ও দেখলাম না তার মাঝে !!
সে বারবার উত্তেজিত হয়ে কথা বলতে লাগলো!!
শেষে আমি বললাম আমি যাবো না, আপনি আমার টিকেটের টাকা রিটার্ন করেন?
বিশ্বরোড কাউন্টার মাস্টার আমাকে বললো পিছনের ওই সীটটি জানালার পাশে ভালো সীট !! আমি তখন বললাম ভাই, তাইলে আপনি ওইটা ভৈরব থেকে কাউকে দিয়ে দিন, আমি আমার সামনের সীটেই বসি।। তখন পাশ থেকে সুপার ভাইজার পূর্বের ন্যায় উত্তেজিত হয়েই বলতেছে ভাই ওইটা হবে না! ভৈরব থেকে দিলেও আমি দিবো না!! আপনি পৈরতলা ফোন দিয়ে বলেন সীট নাই!!
আচ্ছা সবার কাছে একটা প্রশ্নঃ ভৈরবের যাত্রী যদি সামনের সীটে বসতে পারে, তবে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার যাত্রীরা কেনো পারবে না?? ভৈরবের যাত্রী টাকা দিয়ে টিকেট কেটে যায়, আর ব্রাহ্মণবাড়িয়ার যাত্রীদের কি ফ্রী তে নেওয়া হয়??
যদি তাই না হয় তবে কেনো পরিবহন সেক্টরে এখনো এমন বৈষম্য??
হিসেব মতে তো ব্রাহ্মণবাড়িয়ার যাত্রীরা অগ্রাধিকার পাবার কথা বেশি, কারণ ভৈরব থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার যাত্রীরা বেশি টাকা পরিশোধ করে ভ্রমণ করে থাকেন!!
যাইহোক তাদের সাথে আমি আর কথা না বাড়িয়ে, টিকেটের গায়ে লিখা অভিযোগ নাম্বারে ফোন দিলাম এবং বিস্তারিত খুলে বললাম,
যে আমি A3 সীটে যেতে চাচ্ছি কিন্তু সুপার ভাইজার বলছে এই সীট ভৈরবের জন্য তাই আমি এই সীটে যেতে পারবো না!! আমার কথা শুনে অপরপ্রান্তে থাকা ভদ্র লোকটি বললো আপনি কোথায় থেকে উঠেছেন, আর এখন কোথায় আছেন?? বললাম পৈরতলা থেকে টিকেট নিয়েছি, এখন বিশ্বরোড আছি। ভদ্র লোকটি বললো আপনি এই সীটে যেতে পারবেন না সেটা কে বলেছে?? আমি বললাম আপনাদের গাড়ীর সুপার ভাইজার!! আমার কথা শুনে ভদ্র লোক মর্মাহত হয়েছে মনে হলো!! তিনি সঙ্গে সঙ্গে সুপার ভাইজারের হাতে ফোনটি দিতে বললেন!! আমি দেরী না করে সুপার ভাইজারের হাতে ফোন ধরিয়ে দিলাম !!!
আর সত্যি বলতে কি এর পরের বাকিটা ছিলো ইতিহাস !!!
যদিও ভদ্রলোক সুপার ভাইজার কে কি বলছিলো শুনি নাই,,, তবে সুপার ভাইজার যেভাবে আমার পানে তাকাচ্ছিলো, সেটা দেখে খুব সহজেই বুঝতে পারছিলাম, আমার অভিযোগে সুপার ভাইজারের উপর খুব ক্ষেপেছেন ভদ্রলোক!!
সুপার ভাইজার আমার হাতে ফোনটি ধরিয়ে দিয়ে বললো নেন কথা বলুন, আমি ফোন কানে দিলাম, অপরপ্রান্ত থেকে ভদ্রলোকটি খুব বিনয়ের সাথেই বললেন ভাই আপনি যে সীট নিয়েছেন সেই সীটে বসেই যাবেন কোনো সমস্যা নাই!! এছাড়াও যদি আপনার অন্য সীটে বসতেও ইচ্ছে হয়, তবে খালি থাকলে সেই সীটে বসে ও আপনি যেতে পারেন, কেউ আপনাকে কিচ্ছু বলবে না!! ভদ্রলোককে ধন্যবাদ জানিয়ে ফোন রাখলাম।।
শেষ পর্যন্ত নিজের পছন্দের A3 সীটে বসেই ঢাকা পৌঁছালাম।।
অভিজ্ঞতাঃ মূলত আজকের ভ্রমণে খুব ভালো একটি ব্যাপারে অভিজ্ঞতা হয়েছে, আর তা হলো ঢাকা টু ব্রাহ্মণবাড়িয়া রোডে চলাচলকৃত পরিবহন বহরে লাখ লাখ টাকার বিলাস বহুল অত্যাধুনিক গাড়ীর ব্যবস্থা করে যাচ্ছেন মালিক পক্ষ,, কিন্তু কিছু সংখ্যক বেয়াদব, অভদ্র আর ফাজিল টাইপের ষ্টাফ সুপার ভাইজারদের দ্বারা যাত্রী হয়রানীর কারণে, বেশিরভাগ সময়েই মালিকপক্ষ লসের সম্মুখীন হচ্ছেন। আবার ভালো ভালো ব্যানারের ভালো ভালো গাড়ীগুলোর প্রতি ও মানুষের দিন দিন আস্থা হারিয়ে যাচ্ছে !!!
আর এই সুযোগে ফায়দা লুটে নিচ্ছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার উপর দিয়ে যাতায়াতকারী অন্য জেলার বাস সার্ভিস গুলো।।
পরিশেষে আমি আবারো ধন্যবাদ জ্ঞাপন করছি ইকোনো পরিবহনের সেই ভদ্রলোকটির প্রতি, যিনি অভিযোগ পাবার সাথে সাথেই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়েছেন!!!


-----------------------

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাস সার্ভিস সংক্রান্ত সকল মতামত, পরামর্শ ও অভিযোগ সহজে মালিকপক্ষের কাছে পৌছে দিতে Buses of Brahmanbaria গ্রুপে জয়েন করুন। ধন্যবাদ।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

[blogger]

MKRdezign

যোগাযোগ ফর্ম

নাম

ইমেল *

বার্তা *

Blogger দ্বারা পরিচালিত.
Javascript DisablePlease Enable Javascript To See All Widget